বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ অপরাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
সংবাদ শিরোনাম :
তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিড়ি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর, খেসারাতটাও দিতে হল তেমনি ভয়ঙ্কর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের ৫ সদস্যের বরিশাল মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন গৌরনদীতে ইউএনওর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে খালের কুচুরিপানা ও ময়লা পরিস্কার করল বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা বর্নাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে গৌরনদীতে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত আমাদের নেতা তারেক রহমান একটি সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চান-জহির উদ্দিন স্বপন মেয়র হারিছ গ্রেপ্তারের খবরে গৌরনদীতে সাধারন মানুষের উল্লাস ফাঁসির দাবিতে বিএনপির বিক্ষাভ মিছিল গৌরনদীতে এইচপিভি টিকা দান ক্যাম্পেইনের শুভ উদ্বোধন কাশিপুরের ড্রেজার ব্যবসায়ী সুমনের অপকর্মে কেউ খুন হলে দায় নেবে না বিএনপি
জীবন নদীর কূল পাচ্ছেন না ভোলার বাবুল মাঝি

জীবন নদীর কূল পাচ্ছেন না ভোলার বাবুল মাঝি

তজুমদ্দিন প্রতিবেদক ॥ স্বপ্ন ছিল ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার। তারপর একটি ঘর তুলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালোভাবে থাকার। সেই স্বপ্ন পূরণে প্রতিদিন জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ শিকার যেতেন ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাওলানাকান্দি গ্রামের বাবুল মাঝি (৪৫)। তার চোখেমুখে ছিল স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা। কিন্তু একদিন হঠাৎ একটি ঝড় তার স্বপ্নগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের কষ্ট করে জমানো অর্থ ও নিজের শেষ সম্বল ঘরবাড়ি, ভিটা বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমানে সব হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন। এখন নিজের চিকিৎসা করানো তো দূরের কথা; পরিবারের সদস্যদের দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে প্রতিদিনই মানুষের কাছে হাত পাততে হচ্ছে বাবুলের। এমনকি টাকার অভাবে মেয়েকে শ্বশুর বাড়িতেও পাঠাতে পারছেন না। গত সাত দিন ধরে পরিবারের সবাই অভুক্ত থাকায় ৫ ডিসেম্বর বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিতে বাধ্য হন বাবুল মাঝি। যে হাত কাজ করে পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন জোগাতো, সে হাত দিয়ে আজ ভিক্ষাবৃত্তি করে তাদের মুখের খাবার দেয়ার চেষ্টা করছে।
বাবুল মাঝি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে জেলে পেশায় নিয়োজিত ছিলাম। বাবার মারা গেছেন অনেক আগে। সংসারে বৃদ্ধ মা, আমি, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে আমার সংসার ছিল। মাছ শিকার করে ভালোভাবেই আমার সংসার চলছিল। সবসময় স্বপ্ন দেখতাম মেয়ে ও ছেলেকে পড়াশুনা করিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলব। তারা সরকারি ভালো চাকরি করবে। তারপর একটি ভালো ঘর তুলে সবাইকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করব। ভালো ছেলে দেখে মেয়েদের বিয়ে দেব। সব কিছু ঠিকমতোই চলছিল। আট বছর আগে নদীতে মাছ শিকার করে দুপুরের বাড়ি আসি। ঘরের পাশের আম গাছের পাকা আম পাড়তে গাছে উঠি। ওই সময় হঠাৎ গাছের ডাল ভেঙে নিচে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আর যখন জ্ঞান ফেরে তখন হাসপাতালের বেডে নিজেকে দেখি। শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শ দিলেন বরিশাল গিয়ে চিকিৎসা নিতে। বরিশাল গেলাম, ডাক্তার দেখালাম। নিজের জমানো টাকা শেষ হয়ে গেল। শরীরের আঘাত পাওয়া অন্য অঙ্গ ঠিক হলেও ভেঙে পাওয়া দুই পা ঠিক হয়নি। বরিশালের ডাক্তাররা ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে বলেন। টাকার অভাবে ঢাকা না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। স্ত্রী-সন্তানরা আমাকে সুস্থ করে তুলতে ঘর-ভিটে বিক্রি করতে বলে। আমি তখন তাদের বিক্রি না করতে বলি। কিন্তু তাদের কথা ছিল আমি সুস্থ হলে আবারো ঘর-ভিটা হবে। নিরূপায় হয়ে ঘর-ভিটা বিক্রি করে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ টাকা খরচ করেছি চিকিৎসার জন্য।
‘পরে আরও টাকার প্রায়োজন কিন্তু টাকা না থাকায় আর চিকিৎসা হয়নি। দুই মেয়ে ও ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। আর নিজে দুই পা হারিয়ে পঙ্গু জীবন কাটাতে থাকি। ধার-দেনা ও খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটাতে থাকি। গত কয়েক বছর আগে বিভিন্ন এনজিও ও স্থানীয়দের কাছ থেকে ধার-দেনা করে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। সে দেনা এখনো পরিশোধ হয়নি। ছোট মেয়েকে ৪-৫ মাস আগে বিয়ে দিয়েছি ধার-দেনা করে। এখনো মেয়েদের শ্বশুর বাড়ির দাবি পূরণ করতে পারিনি’-বলতে থাকেন বাবুল মাঝি। এদিকে প্রতিনিয়ত পাওনাদারদের টাকা পরিশোধের চাপ বাড়ছে। ছোট মেয়ে এখন বাড়িতেই থাকেন। টাকার অভাবে তাকে শ্বশুর বাড়িতে পাঠানো যাচ্ছে না। বাবুল মাঝি বলেন, ‘গত এক মাস ধরে বৃদ্ধ অসুস্থ মা, স্ত্রী ও সন্তানদের মুখে দু-বেলা খাবার তুলে দিতে পারিনি। আমি পঙ্গু মানুষ কোনো কাজ করতে পারি না। কারো সাহায্য ছাড়া চলতেও পারি না। কেউ আমাকে কাজে রাখতে চায় না। গত সাত দিন ঘরের সবাই না খেয়ে ছিলাম। পরে বৃদ্ধ মা ও স্ত্রী সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে না পেরে বাধ্য হয়ে গত শনিবার ভিক্ষাবৃত্তির কাজে নেমে পরি। একটি ভ্যান নিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ভিক্ষা করি। প্রতিদিন ১০০-১৫০ টাকা পাই। তা থেকে ভ্যানচালককে অর্ধেক দিতে হয়। তাতেও ভ্যানচালক রাজি হয় না। আমাকে এত অল্প টাকায় সে বয়ে বেড়াতে চায় না। তাকে অনুরোধ করে হাত-পা ধরে রেখেছি। নিরূপায় হয়ে ভিক্ষা করতে হচ্ছে বলে জানান এই বৃদ্ধ। তিনি বলেন, আমি ভিক্ষা করতে চাই না। তবে এখন ভিক্ষা না করে উপায়ও নেই। তবে কেউ যদি আমাকে সহযোগিতা করতেন, তাহলে কোনো ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবন নির্বাহ করতাম। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। তজুমদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পল্লব কুমার হাজরা বলেন, ‘বাবুল মাঝির বিষয়ে কেউ কখনো আমাদের বলেনি। সেও কখনো আমাদের কাছে আসেনি। আমি তার খোঁজখবর নিচ্ছি। খুব দ্রুত তাকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। বাবুল মাঝির সঙ্গে ০১৭২৫৭৮৫৭০৯ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com